আহমদ ছফা'র প্রবন্ধ: ত্রি বঙ্গাশ্চর্য পরিচয় (পূনঃপ্রকাশ ও পূনঃপাঠ)


নাম উল্লেখ করব নানাম উল্লেখ করার বিপদ না থাকুক একটা অন্যরকম সমস্যা আছেকাউকে নাম ধরে কিছু বললে মানুষ মনে করতে পারে তার সঙ্গে লেখকের একটা বিরোধ আছে, তাই তিনি সংবাদপত্রের পাতায় ঝাল প্রকাশ করতে উদ্যত হয়েছেনতারপরেও এ রচনায় কিছু ভদ্রলোকের প্রসঙ্গ আসবেআমার এ রচনাটি পাঠ করলে পাঠক ভদ্রমহোদয় এবং মহিলারা তাদের চিনে নিতে পারবেন

আমি জনপ্রিয় লেখক নইসুতরাং এই লেখা পাঠ করে কোন কোন পাঠক-পাঠিকা মনে করতে পারেন, নিজের মনের সুপ্ত ঈর্ষাবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য অপরকে দোষারোপ করছেন
এধরনের কথা যদি ওঠে, আমি প্রতিবাদ করব নামানুষ তো কতগুলো মনস্তাত্ত্বিক তাড়না দ্বারাই চালিত হয়ে থাকেমনস্তত্ত্ববিদদের অনেকেই বলেন, তৈমুর লং খোড়া ছিলেন বলেই বিশ্বজয়ের পরিকল্পনা করেছিলেননেপোলিয়ন দেখতে খাটো ছিলেন বলেই তাঁর শারীরিক দৈর্ঘ্যের হ্রস্বতার পরিমাপে সমগ্র ইউরোপকে নোয়াতে চেয়েছিলেনআমি পাঠকদের অপ্রিয় লেখক, সেই কারণটাই যদি এ রচনার মুখ্য হেতু হয়ে থাকে, আশা করি কারো কিছু বলবার থাকবে নামানুষের কাজ করার পেছনে কোন না কোন কারণ বর্তমান থাকেকাজটা যখন শেষ হয় লোকে ফল দিয়ে বিচার করেকারণের কথা কেউ মনে রাখে না
আপনারা দেখতে পাচ্ছেন একটুখানি ভণিতা করলামভণিতার প্রয়োজন বোধ করেছি এ কারণে যে আপনি যখন কোদালকে কোদাল বলতে পারবেন না, বদমাশকে বদমাশ বলতে পারবেন না, অথচ ভাবাবেগটি প্রকাশ করতে হবে, তখনই এই ভণিতা বস্তুটি এসে পড়তে বাধ্যভণিতার আবার রকমফের আছেএকটা উল্লেখ করবনাভিতে সর্ষের তেল দিয়ে ভারতচন্দ্র একবার কৃষ্ণনগরে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের চণ্ডীমণ্ডপে চিৎ হয়ে নিদ্রা দিচ্ছিলেনসেই সময়ে দেবী অন্নপূর্ণা স্বপ্নে দর্শন দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা ভারত, তুমি কী কর? ভারতচন্দ্র  বললেন, মা আমার কাজ দুইটাএক, রাজার তোষামোদী করা, আর বেলাবেলি নিদ্রা দেয়াদেবী বললেন, রাজানুগ্রহ মন্দ জিনিস নয়, ওই বস্তু পেতে হলে তোমাকে তোষামোদী করতেই হবেকিন্তু বাবা যখন তখন নিদ্রা দেয়াটা ভাল কাজ নয়কথাটা ভেবে দেখবেভারত বললেন, মা, আমি মদ-গাঁজা খাই না, রেণ্ডি বাড়ি যাই না, এই যে বিপুল অফুরন্ত সময় আমার সামনে পড়ে আছে, সেটা যাপন করব কিভাবে! দেবী বললেন, ভারত তুমি বোকা, কিভাবে সময় ভক্ষণ করবে এটা জান না, এত বয়স হলভারতচন্দ্র বললেন, মা, এত বয়সে যখন জানা হয়নি, ভবিষ্যতেও জানা হবে নাতুমি যখন অনুগ্রহ করে সন্তান সম্বোধন করছ, দয়া করে বলে দাও আমাকে কী কাজ করতে হবে
দেবী তুষ্ট হয়ে বললেন, বেটাতুমি আমার মনের গহন কথাটি ধরে ফেলেছএই বঙ্গভূমিতে তুমি আমার পূজার প্রচলন করভারত বললেন, মা, সেটি হবার নয়তুমি তো ভাল করেই জান আমি পূজারী বামুন নই, আমি কী করে পূজার প্রচলন করবদেবী বললেন, ভারত, তোমার বোকামি গেল নাতুমি আমার নামে ভক্তিরস মিশিয়ে কেতাব লেখপূজা আপনি চালু হবেএকটু বেশিই বলে ফেললামতোমার পক্ষে নির্ভেজাল ভক্তিরস সৃষ্টি করা সম্ভব নয়কারণ নবদ্বীপের নাগর সমাজে এটি খুব সুলভ বস্তু নয়, তবে তোমার ক্ষমতা আছেআমি জানি তুমি কেতাব লিখতে গেলে আরবি-ফারসি আসবে, খিস্তি-খেউর আসবে, তুমি জিলিপি খেতে যে রকম পছন্দ কর, তারও চাইতে বেশি পছন্দ কর অশ্লীলতাএই বস্তু তুমি বাদ দিতে পারবে না, তথাপি তোমার শক্তির প্রতি অগাধ আস্থা আছেতুমি লিখে যাও, লিখলে আমার পূজা আপনিই চালু হবে
ভারতচন্দ্র এ যুগে জন্মালে কী রকম ভণিতা করতেন বলতে পারব নাআগের যুগে জন্মেছিলেন বলে ভিন্ন রকম ভণিতা লিখেছিলেনকৃত্তিবাস, কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম, আলাওল সকলেই তাঁদের কাব্যের ভণিতা রেখে গেছেনভণিতার গীত গাইতে গেলে আমার বক্তব্য বিষয়টি বলা হবে না
আমার কথায় চলে আসিআমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের তিনটি আশ্চর্য জিনিসের নাম করুন দেখিকেউ আমাকে এ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেনিতাই বলাও হয়নিকথাটা হরিণশিশুর শিঙের মত মনের মধ্যে গুতো দিচ্ছে, তাই ফাঁস করতে যাচ্ছি
আমার বিচারে স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোত্তম আশ্চর্য বস্তু হল হযরত মাওলানা আলহাজ্ব দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীতাঁকে কী কারণে এ দুর্লভ সম্মানে ভূষিত করতে হল সেটা একটু ব্যাখ্যা করার দাবি রাখেগত ফাল্গুনে আমি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখি আমার ভাতৃবধূ কে-টু সিগারেট পান করছেন এবং ক্যাসেটে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেবের মিলাদ শুনছেনআমার বাবা-মা যদ্দিন বেঁচেছিলেন ওই মহিলাকে জোর করে একবারও নামাযের পাটিতে দাঁড় করাতে পারেননিআমার ভাইও অনেক চেষ্টা করে ক্ষান্ত দিয়েছিলেনআমি দেখলাম হযরত সাঈদী এই মহিলার অন্তরে ধর্মপিপাসা জাগ্রত করতে সক্ষম হয়েছেনতারপরেও যদি তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি দিতে আমি রাজি না হই, নিজের উৎকৃষ্ট অংশের প্রতি আমি অবিচার করবভাবীর এই রূপান্তর দেখে আমি নিজেও হযরতের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিতার কারণ আছেঅন্য মাওলানার মিলাদ আমি শুনেছিতাঁরা ধর্মকথা পুণ্যকথা বলেনকিন্তু সেগুলো বোরিং লাগেমাওলানা সাঈদীর ক্যাসেট যখন শুনলাম, বুঝতে পারলাম মিলাদ কাকে বলেএখনে ধর্ম অর্থ মোক্ষ কাম সব মলহযরত সাঈদী যদি গান করতেন, মাইকেল জ্যাকসনের কাছাকাছি পৌঁছুতেনঅভিনয় করলে ছবি বিশ্বাসকে ছাড়িয়ে যেতেননাচ করলে বুলবুল চৌধুরীর রেকর্ড ম্লান হয়ে যেতনাচ গান অভিনয় এবং তার ওপর ধর্মকথা এই একের ভেতর চার তিনি সমন্বয় করেছেনতাঁকে কী করে আমি সামান্য মানুষ বলব, সুতরাং বরণীয় স্মরণীয়দের তালিকায় আমি সাঈদী সাহেবকে একটা জায়গা দিয়ে বসে আছি
একটা আশ্চর্য বস্তুর কথা বললামএখন দ্বিতীয়টিতে আসিসেটা হল টঙ্গির তুরাগ নদীর পাড়ের তাবলিগ জামাতএইবার পত্র-পত্রিকার হিসাবে পঞ্চাশ লক্ষ লোক সমাগম ঘটেছিলঅর্থাৎ হজ্বের তিনগুণএর একটি বিরাট অংশ এসেছে দুনিয়ার নানা মুসলিম দেশ থেকেভবিষ্যতে যদি এই বিদেশাগত অতিথিদের ওপর ট্যাক্স ধার্য করি এবং এই পুণ্যতীর্থে আসার জন্য কিঞ্চিৎ দক্ষিণা আমরা দাবি করি, আশা করি উম্মাহভক্ত মুসলমান ভাইরা সেটা দিতে রাজি হবেনসৌদি আরব তেল পাওয়ার আগে হাজী দোহন করে সংবৎসরের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতআমাদের সামনে সে রকম একটি সুবর্ণ সুযোগ সমাগত, আমরা চিংড়ি, পোশাক এইসব রফতানি করে কিছু টাকা ঘরে আনছিআমার ধারণা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের নিমন্ত্রণ করে এনে তারও চাইতে বেশি টাকা পয়সা আয় করতে পারবস্বাধীন সার্বভৌম ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের সব চাইতে বড় কীর্তি হল এই তাবলীগ জামাতজনান্তিকে কিন্তু একটা কথা বলে রাখবধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইরা যেন আমার ওপর অনর্থক চটে না যানআমি বাংলাদেশের বড় ঘটনা হিসেবে তাবলীগ জামাতের এই আশ্চর্য কীর্তির কথা ঘোষণা করলামস্বাধীন বাংলাদেশের শেখ মুজিবের মৃত্যু ছাড়া এর চেয়ে বড় ঘটনা ঘটেনি
দুটো আশ্চর্য বিষয়ের কথা বিবৃত করলামএখন তৃতীয় বিষয়ে আসিএটা একটু বিব্রতকরকারণ এই বিষয়টির সঙ্গে আমার পেশার প্রত্যক্ষ না হলেও একটা নেপথ্য যোগাযোগ রয়েছেতবু বলে ফেলিকম তাৎপর্যসম্পন্ন হালের তৃতীয় আশ্চর্য বিষয়টি হল আমাদের তিন-চারজন লেখকএই রচনার শুরুতেই পাঠককে প্রতিশ্রতি দিয়েছি তাদের নাম উল্লেখ করব নাএখন দেখছি কাজটা ভাল করেছিকারণ এই লেখকদের প্রতি পাঠক-সাধারণের যে আকর্ষণ, যে ভক্তি-শ্রদ্ধা রয়েছে, সেটা যদি আমি জখম করি তাহলে আল্লার দরবারে গোনাহগার বান্দা হিসেবে চিহ্নিত হবআমি লিখে দুধভাত না হোক অন্তত নুনভাত তো খাচ্ছিযখন দেখতে পাই আমার পেশার কোন ব্যক্তি নিজ নিজ প্রতিভাবলে দেশের চিত্ত জয় করেছেন সেটা আমারও গৌরবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়তাঁরা শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের সত্তরতম জন্মবার্ষিকীতে যে অভিনন্দনপত্রটি রচনা করেছিলেন তার বয়ান ছিল এই রকম কবিগুরু তোমার দিকে চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের অবধি নাইবাণীর দেউল আজি গগন স্পর্শ করিয়াছেইহার নির্মাণকল্পে কত কবি কত শিল্পী কত সাহিত্যিক যুগ যুগ ধরিয়া অর্ঘ্যসম্ভার বহন করিয়া আসিয়াছেতোমার সাধনার মধ্যে তাহাদের সকলের সাধনা পূর্ণতা লাভ করিয়াছেতোমাকে প্রণাম করিতে গিয়া তাঁহাদের সকলকে প্রণাম করিতেছি
আমার মত প্রায় ব্যর্থ লেখক, যারা লিখে উজ্জ্বলভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন পণ্ডিত রামনারায়ণ তর্কালঙ্কারের সময় থেকে দেখে আসছিল, তার ফলবান প্রকাশ ঘটেছে আমাদের এই প্রিয় দেশটির তিন-চারজন কীর্তিমান লেখকের অঘটনঘটনপটিয়সী উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যেসুতরাং তাদের প্রতি যুক্ত করে যদি সালাম নিবেদন না করি, আমরা নিজের উপরই অবিচার করব এরকম আশঙ্কা জাগেপাঠক-পাঠিকা ভাইবোনেরা, আপনারা যদি কখনো বাংলাবাজার যান, আমি কেন শ্রদ্ধা নিবেদন করছি তার কারণটি নিজের চোখে দেখতে পাবেনএকটি কিংবদন্তী আছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে একজন মানুষ বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতিকে পৃথিবীর চূড়ায় দাঁড় করাতে পেরেছিলেনহালের এই তিন-চারজন লেখক রবীন্দ্রনাথের বিচরণক্ষেত্রটি একেবারে সংকুচিত করে দাড়িঅলা ছবিটি কাঁচের ফ্রেমের মধ্যে আটকে ফেলতে সক্ষম হয়েছেনএখন বাংলাবাজারে আপনি যদি রবীন্দ্রনাথ কিংবা অন্য কোন বড় লেখকের নাম উচ্চারণ করেন প্রকাশকরা আপনাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে তেড়ে আসবেনবাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার অনেক দুর্নাম আছেতথাপি প্রকাশকদের হাতে মৃত্যুদণ্ড দানের ক্ষমতাটি দেওয়া হয়নি বলে অনেক পাঠক পৈতৃক প্রাণটা বাঁচাতে সক্ষম হনএই লেখকদের একচ্ছত্র প্রতাপ-প্রতিপত্তির কীর্তন করার ক্ষমতা আমার কলমের থাকার কথা নয়কেননা আমিও তো লেখকগুণকীর্তন করতে গেলে ঈর্ষার ভাবটি আপনি এসে পড়ে
আবেগ অনুভূতি যথাসম্ভব চাপা দিয়ে এঁদের মাহাত্ম্যের কথাটি প্রকাশ করা আমার একটি কর্তব্যএঁদের পারঙ্গমতার কথা আর কী বলবতরুণ তরুণ বাচ্চা ছেলেরা সংবাদপত্রে চিঠিপত্র প্রকাশ করেনঅমুক লেখন ভাই, দেশে বন্যা হচ্ছে, খরা হচ্ছে, আপনি এ দিকটা দেখবেনআল্লাহতালার কাছে লোকে যে সমস্ত আবদার অনুরোধ করতে সাহস পায় না, সে সকল দাবি ওই লেখকদের কাছে করা হয়আমরা একটা অপূর্ব যুগে বাস করছিএ সময়ে বাংলাদেশে অনেক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেছেতার অনেকগুলোই প্রচারযন্ত্রের কল্যাণে আপনারা জানতে পেরেছেনআপনারা জেনেছেন, খলিলুল্লাহ নামের এক তরুণ মরা মানুষের কলিজা ভক্ষণ করেমাদারীপুরে আবু নসর মিয়ার কাঁঠাল গাছে খেজুরের রস পাওয়া যাচ্ছেফরিদপুরে রিকশাচালকের চার বৎসরের ছাওয়ালের জননেন্দ্রিয়ের দৈর্ঘ্য গিনেস বুকে রেকর্ড করা হয়েছেএক ভদ্রমহিলা একটি ক্লিনিকে একসঙ্গে সাতটি বাচ্চা প্রসব করেছেনসংবাদপত্রে আরো প্রকাশ, সুদখোরের কবর ফেটে লকলকে আগুনের শিখা জ্বলে উঠেছে এবং তিনজন মাওলানা সেই দৃশ্য অবলোকন করেছেনতাঁরা এখন আসন্ন কেয়ামতের কথা ঘোষণা করে যাচ্ছেনএই সমস্ত ঘটনা ঘটেছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশেযেখানে প্রভাতকালে শাপলা-পদ্ম ইত্যাকার পুষ্প আকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকেবাংলাদেশের এই যে নানাবিধ সম্ভাবনা নানা আলামতের মধ্য দিয়ে প্রকাশমান হচ্ছে, তার মূর্ত প্রকাশ ঘটছে আমাদের এই লেখকদের রচনায়এঁদের সবচাইতে বড় কৃতিত্ব লেখার ভাববস্তু এবং কথাবস্তুর মধ্যে ফারাক চিহ্নটা মুছে ফেলতে পেরেছেনআজকের দিনের ফিজিক্সে যেমন বস্তু এবং ভাবের ভেদরেখা ঘুচে গেছে তেমনি, এই লেখকেরা সাহিত্যের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব আশ্চর্য অবিশ্বাস্য ঘটনারাজি ঘটেছে তার চমৎকার মিশেল দিতে পেরেছেনএই ধরনের ব্যাপার ইতোপূর্বে আর কখনো ঘটেনিসাঈদী সাহেব যে পরিমাণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, দেশে সাক্ষর জনসংখ্যা শতকরা একশ ভাগ হলে এরকম একেকটি আসন এইসব লেখকরাও দখল করে নিতে পারতেনপরিতাপের কথা হল দেশটির আশি ভাগ লোক মূর্খ এবং বর্ণপরিচয়হীনমূর্খ থাকাটা দুঃখের কথা নয়কিন্তু মূর্খ থাকার কারণে যে তাঁরা আমাদের এই প্রতিভাশালী লেখকদের কথামৃত পাঠ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, সেটাই জাতির মস্ত বড় লোকসানপাঠক-পাঠিকা ভাই-বোনেরা, ইতিহাসে কখনো কখনো আশ্চর্য সময় আসে, যখন অদ্ভুতকর্মা মানুষেরা জন্মগ্রহণ করতে থাকেনআমাদের দেশে সেই সময়টি এসে গেছেআমি যথেষ্ট ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি হলে বলতাম, হযরত ইমাম মেহেদী সাহেব একা নন, দলে বলে আমাদের বঙ্গভূমিতে অবতীর্ণ হয়েছেনতাঁদের কেরামত এত অধিক যে মাতৃজঠরের শিশুকেও তারা মুরিদ বানিয়ে ফেলতে পারছেনউল্লেখ করেছি, দেশটি অশিক্ষিত, তাই আমাদের সমাজে এই লেখকদের চিন্তা-চেতনা ক্রিয়াশীল হতে পারছে নাপাঠক-পাঠিকা ভাইবোনেরা আসল গল্পটা করা হল নাযতটুকু বিবৃত করলাম তাতে ব্যর্থ লেখকের কৃতিত্ব এই, হযরত মাওলানা সাঈদী, তুরাগ পাড়ের অভূতপূর্ব জনসমাগম এবং অদ্ভুতকর্মা লেখকদের আমি যুগলক্ষণ হিসেবে দেখিতে পেরেছিআগামীতে যদি কোনদিন
(সূত্র: নূরুল আনোয়ার সম্পাদিত, আহমদ ছফা রচনাবলি, ৫ম খণ্ডপৃ. ১৯৮-২০২)

0 comments:

My Blog List

নন্দন সম্পাদক ইমন রেজার লিংক

©2009 nondon an open platform on Art Literature and Culture.

Back to TOP